তার বিহীন বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা আদৌ কি সম্ভব?

maxresdefault.jpg

Wire Free Electricity এর প্রথম ধারণা নিয়ে আসেন বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা। এজন্য তিনি এমন একটি টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তারবিহীন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সুযোগ পেতে পারতো।
ঠিক যেমন আমার আজকের দিনে ওয়াইফাই মাধ্যমে একাধিক ফোনের সাথে কানেক্ট করে ইন্টারনেট ব্যবহার করি অনেকটা সেরকম ব্যবস্থা।
যদিও শেষ পর্যন্ত কিছু মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীদের অপকৌশল এবং রাজনৈতিক প্রপাগান্ডার ফলে সেই প্রকল্পটির আর আলোর মুখ দেখেনি।
তার মানে বিজ্ঞানী টেসলার অধরা স্বপ্ন কি কোনদিনও আলোর মুখ দেখবে না?
বিজ্ঞানী টেসলা তার জীবনকালে যা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি সেই কাজে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (MIT) একদল গবেষক।
২০১৮ সালের শুরুতে তাঁরা ওয়াইফাই এর মাধ্যমে ডিভাইসে ইলেকট্রিসিটি সরবরাহের সফল পরীক্ষা চালিয়েছেন।
এক্ষেত্রে তাঁরা molybdenum disulfide (MoS2) ব্যবহার করে তৈরি করা নতুন ধরনের “রেকটেনা” নামক একটি যন্ত্র ব্যবহার করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি খবর ২০১৮ সালের ২৮ শে জানুয়ারি MIT News এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।
তাঁদের উদ্ভাবিত যন্ত্রটি দ্বিমাত্রিক। যার ভেতর দিয়ে ওয়াই-ফাই তরঙ্গ অতিক্রম করলে তা পরিবর্তনশীল বিভিন্ন দিকমুখী বিদ্যুৎকে (এসি) একমুখী বিদ্যুতে (ডিসি)-রূপান্তর করবে, ফলে সেই যন্ত্রে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। এখানে ব্যবহৃত হবে নতুন একধরনের ‘রেকটেনা’(সংকেত গ্রহণকারী একধরনের রিসিভার অ্যানটেনা)।
রেকটেনার কাজ হলো তড়িৎ–চুম্বকীয় তরঙ্গকে ডিসি বিদ্যুৎ তরঙ্গে রূপান্তর করা।
সেই রেকটেনাতে থাকছে আধুনিক সেমিকন্ডাক্টর, যা ওয়াই-ফাই তরঙ্গকে ধরে ফেলবে এবং তাকে ব্যবহারযোগ্য একমুখী বিদ্যুতে রূপান্তরিত করবে।
এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, এ যন্ত্রটি প্রায় ১৫০ মাইক্রোওয়াটের ওয়াই-ফাই সিগন্যালের থেকে শক্তি নিয়ে প্রায় ৪০ মাইক্রোওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম, যা একটি সিলিকন চিপে শক্তি সরবরাহ কিংবা মোবাইল ফোনের পর্দায় আলো জ্বলানোর জন্য যথেষ্ট।
বর্তমানে এটি উচ্চতর গবেষণার পর্যায়ে আছে।
👉 এদিকে বছরের এপ্রিলে নিউজিল্যান্ডের একটি স্টার্টআপ কোম্পানি ‘Emrod’ দাবি করেছে তারা বিশ্বের প্রথম long-range, high-power, wireless power পরিবহন পদ্ধতি ডেভেলপ করেছে।
আর এই প্রকল্পে খোদ নিউজিল্যান্ড সরকার অর্থায়ন করছে। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি “Powerco” কপার তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবহন ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে ভবিষ্যতে এটি পরীক্ষা করে দেখবে।
ইতিমধ্যে এই প্রকল্প টি রয়েল সোসাইটি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান Emrod ওয়ারলেস সিস্টেমের মাধ্যমে পাওয়ার পরিবহনে নিরাপত্তার দিকটি সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়েছে। তাদের তৈরী প্রোটোটাইপ দিয়ে ওয়ারলেস পাওয়ার পরিবহনের জন্য তারা আয়োনাইজড বিহীন Industrial, Scientific and Medical frequency (ISM) ব্যান্ড ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংস্থাটি আরো জানিয়েছে যে, সর্বোচ্চ সুরক্ষার মান বজায় রাখতে তারা নিয়মিত রেডিওর স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট (আরএসএম) এর সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছে।
এখন দেখার বিষয় এই যে, Emrod কর্তৃক উদ্ভাবিত প্রোটোটাইপটি কতটুকু সফলতার মুখ দেখে।
যদি উক্ত প্রকল্পের পরীক্ষাটি সফল হয় তাহলে তারের জঞ্জাল থেকে পৃথিবী অনেকটা মুক্তি পাবে। প্রকৃতি ফিরে পাবে তার হারানো সৌন্দর্য।
তবে এখানে একটি আশঙ্কাও কাজ করছে। বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা যেখানে মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীদের কারনে তার প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করতে পারেননি, সেখানে বর্তমান সময়ের সার্বিক দিক বিবেচনায় নিউজিল্যান্ডের একটি স্টার্ট আপ কোম্পানি ঠিক কতটুকু সফল হবে সেটাই এখন বিবেচনা করার সময় এসেছে।
আপনার কি মনে হয় খুব শীঘ্রই কি আমরা তারবিহীন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছি?

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top
error: Content is protected !!