ফ্রিলান্সিং শিখতে চাই কিন্তু কীভাবে কোথা থেকে শুরু করবো?
হ্যা! আমাদের যাদের প্রথম থেকেই ইচ্ছা থাকে যে আউটসোর্সিং/ফ্রিলান্সিং করে আয় করবেন তাদের মাথায় সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটা আসে তা হলো কীভাবে আর কোথায় থেকে স্টার্ট করবো?
ব্যাস সার্চ দিলাম গুগলে/ইউটুবে। আমরা বাঙালি…. দু চারটা বেসিক লেভেলের ভিডিও দেখে বুঝলাম যে ফ্রিলান্সিং করতে হলে অডেস্ক/ফাইভার/ফ্রিলান্সার ইত্যাদি মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট খুলে বসেন। আর তারপরেই আসে প্রধান সমস্যা এবার কী করবো? কোথা থেকে ইনকাম করবো? টাকা কীভাবে আসবে?……
.
আশা করি এই প্রশ্নটা নিয়ে নতুনরা যারা বিভ্রান্ত হোন অথবা এখনো বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন তারা কিছুটা হলেও গাইড সহ প্রশ্নের উত্তর পাবেন।
ওকে, এবার প্রশ্ন হলো যে, “কীভাবে ফ্রিলান্সিং করবো? আউটসোর্সিং করবো?”
তাদেরকে আমি প্রশ্ন করবো ফ্রিলান্সিং আর আউটসোর্সিং শব্দের অর্থ কী?.
বিশাল পরিমাণের কিছু লোক তার আনসার দিয়ে থাকে যে, ফ্রিলান্সিং বা আউটসোর্সিং মানে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করা।
নির্ঘাত একটি ভুল ধারণা।
আউট মানে “বহিরাগত” আর “সোর্স” মানে উৎস।
তাহলে শাব্দিক অর্থ দাড়ালো বহিরাগত উৎস।
পারিভাষিক ভাবে মুলত দেশের বাহির থেকে বা ভেতরে কোনো প্রতিষ্ঠান নিজের কাজ নিজে না করে অন্য প্রতিষ্ঠান বা অন্য কর্মিকে দিয়ে করানোকেই আউটসোর্সিং বলে।
এবার ধরুন প্রবাসে যারা কাজ করে এক্সামপল কোনো কম্পানির আন্ডারে। তাহলে ঐ কম্পানি নিজের কাজ নিজে না করে অন্য কর্মিকে দিয়ে করাচ্ছে সেটাও আউটসোর্সিং।
এবার হলো ফ্রিলান্সার….
আপনি একটা সরকারি চাকরি করলে সেখানে আপনার ৮/১০ ঘণ্টা নির্দিষ্ট টাইম বাঁধা থাকে আর ফ্রিলান্সার হলো আপনি চাইলেন, “আমার যখন ইচ্ছা কাজ করবো। নিজের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করবো।” এটাই হলো ফ্রিলান্সিং।
.
এবার হলো বড় প্রশ্ন, রচনামুলক বলেন বা গবেষণামুলক।
যে, কোথায় থেকে কীভাবে শুরু করবো?
.
তার আগে আপনাকে প্রশ্ন করবো,
– “আপনি আয় করবেন নিশ্চয় আপনাকে কেউ টাকা দিবে আপনি সেটা পাবেন সেটাই আয়?”
– “জ্বী।”
– “তাহলে কেউ তো আপনাকে এমনি এমনি টাকা দিবে না কেন সে আপনাকে টাকা দিবে?”
– “আমি তার কাজ করে দিবো বলেই সে টাকা দিবো।”
– “ওকে ফাইন! তাহলে দেখা গেলো ফ্রিলান্সিং এর মেইন পয়েন্ট-ই হলো কাজ করে দেওয়া অন্যজন কাজের মজুরী যেটাকে পে-মেন্ট বলি সেটা দিবে।”
– “হ্যা একদম রাইট।”
– “এবার তাহলে মেইন প্রশ্ন হলো এই যে কাজ করে দিবেন, বিদেশি কারো কাজ করে দিবেন সে বিদেশি ডলার/ইউরো দিবে? কোন কাজটা করে দিবেন? কোন কাজ পারেন অনলাইনে?
– ” না মানে আসলে এখনো তো সেরকম কোনো কাজ পারি না।”
এটাই হলো আমাদের প্রধান সমস্যা। যে কাজ না শিখে না জেনে পিসি/ল্যাপটপ কিনেই দু-চারদিন ভিডিও দেখে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট খুলে ফেলি।
তাহলে এতক্ষণে এটা ক্লিয়ার হলো যে একাউন্ট খুলা বা এসবের আগেও সবথেকে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট হলো কাজ শিখতে হবে।
.
এবার প্রশ্ন কী কাজ শিখবো?
.
তার আগে জানতে হবে অনলাইনে সবথেকে বেশি কোন কাজ চলে?
নিচে তারমধ্যে সর্বোচ্চ টপ কিছু কাজের নাম দিলাম কিন্তু কী কী কাজ চলে সেগুলোর লিস্ট গুগলে ডু মারলেই পাওয়া যাবে।
List…
1- App/Software Development (programming)
2- Website Development.
3- Website Design.
4- graphics Design.
5- Video Editing.
5- Data entry.
এছাড়াও বিস্তারিত লিস্ট পাবেন এই লিংকে
.
নমুনা স্বরূপ কিছু কাজের লিস্ট দিলাম।
তাহলে এখন প্রশ্ন করবেন যে কাজ কীভাবে শিখবো?
কিন্তু তার আগে আরো বড় বিষয় হলো, আপনাকে আগে সিলেক্ট করতে হবে কোন কাজ আপনি শিখবেন?
মনে রাখবেন প্রথমত শুধু মাত্র একটা কাজকেই সিলেক্ট করতে হবে?
এখন যদি প্রশ্ন করি যে কোন কাজ শিখবেন?
এখানেই আমাদের নতুনরা আরেক ভুল করে।
কোন কাজে বেশি টাকা সেটা খুজে বের করে সেটা নিয়ে পরে যায়।
প্রত্যেক কাজের মজুরী সমান না কিন্তু মজুরী কম বেশি তো হয় কাজের কঠিন্য সহজ এর বিচার করে।
.
তাই আপনাকে সেই কাজটাই চয়েজ করতে হবে যেটার প্রতি আপনার শখ।
আমি আবার বলছি, “আপনার শখ”
ইচ্ছা নয়। আর নিজের শখের কাজ যদি পেয়ে যান তাহলে আপনাকে সেটাকেই সবার আগে চয়েজ করতে হবে।
.
এরপরের প্রশ্ন হলো কীভাবে কাজ শিখবেন?…
এখানেই মুলত আমরা বাঙালীরা চরমভাবে মার খাই আর হতাশ হয়ে ফ্রিলান্সিং করার ইচ্ছা ছেড়ে দেই।
তার কারণ হলো অসাধু (আধার বেপারি) প্রাইভেট কিছু আইটি সেন্টার এসব কাজের বড় বড় সাইনবোর্ড লাগিয়ে কাজ শিখানো হয়, দক্ষ শিক্ষক এর মাধ্যমে, এই সেই হাবিজাবি। এসব দেখে আমরা মিডিল ক্লাস ফেমিলির মানুষ কোনোরকম তাদের বড় অংকের ফি টা মেনেজ করে ভর্তি হই।
তারপর তারা ছয় বা সাত মাস পর অ,আ,ক,খ শিখিয়ে ছেড়ে দেয়। বেশি থেকে বেশি বেসিক শিখিয়ে কোনো একটা মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট খুলিয়ে দিয়ে বেসিক বুঝিয়ে, “শেষ কোর্স, আপনারা আসতে পারেন,ধন্যবাদ আবার দেখা হবে।”
.
আর এরপর কিছুদিন এই সেই সবদিক গুলিয়ে পাকিয়ে কিছু করতে না পেরে একসময় আমরা হাল ছেড়ে দেই। আর বলে বেড়াই অনলাইন ইনকাম ভুয়া, ফ্রিলান্সিং এসব ভুয়া।
এবার হলো কোথায় থেকে কাজ শিখবো?
তারজন্য আমার সাজেশন হলো আপনি যেই কাজ শিখবেন বা যে কাজ সিলেক্ট করেছেন সেটার বেসিকের উপর ইউটুব/গুগল/বিং যা-ই আছে বেসিকটা সার্চ দিয়ে যা পারেন বুঝে নিবেন। মাথায় এটা আনবেন না এটা দিয়ে কীভাবে কাজ করবো এই কাজ কোথায় করে দিয়ে টাকা ইনকাম করবো।
শুধু চোখবুজে দু’এক মাস যা পারেন দেখলেন। যে কাজ শিখবেন অন্তত সেটা কী? সাপ নাকি কেচু? খায় না মাথায় দেয়? এই ব্যাপার শিখা হয়ে গেলে তারপর খুজবেন ভালো কোনো আইটি সেন্টার। (যা ইতিমধ্যে প্রত্যেক বিভাগীয়/জেলা পর্যায়ে চলে গেছে।)
সেখান থেকে আপনি জাস্ট ঐ কাজের উপর একদম এডভান্স লেভেলের কাজ করবেন।
তারাই বলে দিবে মার্কেটপ্লেসে কাজ করা থেকে শুরু করে যাবতীয় সব কিছু।
.
শিখা হয়ে গেলে এবার প্রথম ধাপেই লাফ দিয়ে মার্কেটপ্লেসে বিড/গিগ করা শুরু করবেন না । যেই ভুল আমাদের ৯০%ই করে থাকি। ভাই মনে রাখবেন এটা কম্পিটেশন ওয়ার্ল্ড। এখানে এই কাজ আপনি বা আমি একাই পারি এমন না। অনেকেই পারে আমার থেকে ভালো ও অনেকে পারে। তাই প্রথমেই যে কাজ করেছেন সেটার উপর অন্তত ৪/৫ টা প্রজেক্ট করবেন অভিজ্ঞদের কাছে উপস্থাপন করবেন। আর ততক্ষণে আপনি ৭০% স্কিলেড হয়ে যাবেন। তারপর আসবে এবার মার্কেটপ্লেসে হামলা করার পালা। ততদিনে মার্কেটপ্লেস ও বুঝে যাবেন আর না বুঝলে শুধু মার্কেটপ্লেস গুলোর উপর ইউটিউবেই ভালো ভালো টিউটোরিয়াল তো আছেই।
এরপর শুরু হবে আপনার আউটসোর্সিং/ফ্রিলান্সিংয়ের শুরু।
.
এই পোস্টটা লেখার একমাত্র কারণ আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেকে বলে ফ্রিলান্সিং সাইটে একাউন্ট খুলছি কীভাবে কাজ করে টাকা ইনকাম করবো। জিজ্ঞেস করলাম কোন কাজ পারো? সে উত্তর দিলো এখনো তেমন কোনো কাজ পারি না তবে শিখার ইচ্ছা আছে।।। কী অদ্ভুত?
.
বিঃদ্রঃ এই পোস্ট একমাত্র তাদের জন্য যারা ফ্রিলান্সিং/আউটসোর্সিং বিভিন্ন গ্রুপে শুধু ঘুরেন আর ঘুরেন। আর মনের ভেতর জমে থাকে সেই প্রশ্ন।।
কীভাবে কোথায় থেকে ফ্রিলান্সিং শুরু করতে পারি।