কম্পিউটার প্রজন্ম (Computer Generation)
কম্পিউটার প্রজন্মঃ কম্পিউটার আবিষ্কারের প্রাথমিক সময় হতে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন সময় যে মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ও উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তার এক একটি ধাপ বা পর্যায়কে কম্পিউটার প্রজন্ম বা Computer Generation বলে। কম্পিউটার প্রজন্ম বিন্যাসের ক্ষেত্রে সময় নিয়ে কিছুটা মতভেদ থাকলেও উহাদের বৈশিষ্ট্যগত তেমন পার্থক্য নেই। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কম্পিউটার প্রজন্মকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১। প্রথম প্রজন্ম ( ১৯৪৭- ১৯৫২)
২। দ্বিতীয় প্রজন্ম (১৯৫২ – ১৯৬৪)
৩। তৃতীয় প্রজন্ম ( ১৯৬৪ – ১৯৭২)
৪। চতুর্থ প্রজন্ম ( ১৯৭২ – বর্তমান কাল)
৫। পঞ্চম প্রজন্ম বা ভবিষ্যত প্রজন্ম
নিচে বিভিন্ন প্রজন্মের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলঃ-
১। প্রথম প্রজন্ম ( ১৯৪৭-১৯৫২)
প্রথম প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ
১) ভ্যাকুয়াম টিউবের(Vacuum tube) ব্যবহার।
২) চুম্বকীয় ড্রাম মেমরির ব্যবহার।
৩) পাঞ্চকার্ড জাতীয় ইনপুট আউটপুট সামগ্রীর ব্যবহার।
৪) বিশাল আকৃতি ও অত্যাধিক ওজন, তাই সহজে বহনযোগ্য ছিল না।
৫) সীমিত তথ্য ধারণ ক্ষমতা।
৬) অত্যাধিক বিদ্যুৎ খরচ ও তাপ সমস্যা।
৭) এটিতে ডায়োড ও ট্রায়োড বাল্ব ব্যবহার হত।
৮) এ প্রজন্মের কম্পিউটার দশমিক পদ্ধতিতে কাজ করত।
উদাহরণঃ ENIAC, UNIVAC-1, IBM-701, IBM-650, MARK-I, MARK-II ইত্যাদি।
২। দ্বিতীয় প্রজন্ম(১৯৫২-১৯৬৪)ঃ
দ্বিতীয় প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ
১) ভ্যাকুয়াম টিউবের পরিবর্তে ট্রানজিস্টার ও ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের(IC) ব্যবহার।
২) কম্পিউটারের আকৃতি ও আয়তনে সংকোচন।
৩) চুম্বকীয় কোর মেমরি ও ম্যাগনেটিক ডিস্কের ব্যাপক ব্যবহার।
৪) তাপ সমস্যার অবসান, গতি ও নির্ভরযোগ্যতার উন্নতি।
৫) উচ্চতর প্রোগ্রামিং ভাষার উদ্ভব ও ব্যবহার। যেমন- FORTRAN, COBOL, ALGOL ইত্যাদি।
উদাহরণঃ IBM-1620, IBM-1400, GE-200 ইত্যাদি।
৩। তৃতীয় প্রজন্ম(১৯৬৪ -১৯৭২)ঃ
তৃতীয় প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ
১) ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC )-র ব্যবহার।
২) অর্ধপরিবাহী মেমরির ব্যবহার।
৩) মিনি কম্পিউটারের প্রচলন।
৪) আকৃতির ব্যাপক সংকোচন।
৫) ভিডিও ডিসপ্লে ইউনিট ও লাইন প্রিন্টার ইত্যাদি আউটপুট ডিভাইস প্রচলন।
৬) মাউসের ব্যবহার।
৭) বিভিন্ন ধরণের স্মৃতি ব্যবস্থার প্রচলন। যেমন- Magnatic tap, Hard disk, Floppy disk ইত্যাদির প্রচলন।
৮) উচ্চতর ভাষার ব্যাপক উন্নয়ন ও ব্যবহার।
উদাহরণঃ IBM-360, IBM-370, GE-600 ইত্যাদি।
৪। চতুর্থ প্রজন্ম ( ১৯৭২-বর্তমান কাল)ঃ
চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ-
১) মাইক্রোপ্রসেসর(VLSI প্রযুক্তি) উদ্ভব ও ব্যবহার।
২) চুম্বকীয় বাবল মেমরির ব্যবহার।
৩) আকারে ছোট বিধায় সহজে বহনযোগ্য।
৪) ইন্টারনেটসহ নেটওর্য়াক ব্যবস্থার চালু।
৫) অপারেটিং সিস্টেমের উন্নয়ন।
৬) প্যাকেজ প্রোগ্রামের প্রচলন।
৭) মাইক্রোকম্পিউটারের প্রসার ও মেইনফ্রেম কম্পিউটারের প্রচলন।
৮) এটি ব্যাটারি দিয়েও চালানো যায়।
৯) উন্নত ধরণের উচ্চতর ভাষার প্রোগ্রামের উদ্ভব।
উদাহরণঃ IBM-3033, HP-3000, IBM PC, Pentium I, II, III, IV ইত্যাদি।
৫। পঞ্চম প্রজন্ম বা ভবিষ্যত প্রজন্মঃ
পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো-
১) বহু মাইক্রোপ্রসেসর বিশিষ্ট্য একীভূত বর্তনীর ব্যবহার(ULSI)।
২) কৃত্রিম বুদ্ধি থাকার কারণে যে কোন বিষয়ে চিন্তা ভাবনা ও বিচার বিশ্লেণ করার ক্ষমতা থাকবে।
৩) অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের ব্যবহার।
৪) সুপার কম্পিউটারের প্রচলন ও প্রসার।
৫) অবিশ্বাস্য দ্রুতগতি সম্পন্ন ও বিপুল ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার।
৬) স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ ও শ্রবণযোগ্য শব্দ দিয়ে কম্পিউটারের সাথে সংযোগ ও পরিচালনা।
উদাহরণঃ USA তৈরি ETA-D2P, জাপানের তৈরি SUPER SXII, ভারতের তৈরি PARAM ইত্যাদি।