গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট

কম্পিউটারের মৌলিক ধারণাঃ পর্ব-০৩

maxresdefault.jpg

                                কম্পিউটারের প্রকারভেদ (Various types of Computer)

প্রয়োগের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটারের প্রকারভেদঃ প্রয়োগের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার দু,প্রকার। যথাঃ-
1. i) সাধারণ কম্পিউটার
2. ii) বিশেষ কম্পিউটার

i) সাধারণ কম্পিউটারঃ সাধারণভাবে যে কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের কাজ সম্পাদন করা হয় তাকে সাধারণ কম্পিউটার বলা হয়। এ ধরণের কম্পিউটারে ব্যবহারকারী তার ইচ্ছা অনুযায়ী নতুন প্রোগ্রাম সংযোজন বা পুরাতন প্রোগ্রাম মুছে ফেলতে পারেন। এ ধরণের কম্পিউটারের সাহায্যে কখনো ওযার্ড প্রসেসিং, কখনো ¯েপ্রডশীট প্রোগ্রাম, আবার কখনো বিভিন্ন ধরণের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের কাজ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ- মাইক্রো কম্পিউটার ও মিনি কম্পিউটার। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজ যথাঃ- অফিস-আদালত, ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, প্রকাশনা, মুদ্রণ ইত্যাদি কাজে সাধারণ কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ii) বিশেষ কম্পিউটারঃ যে কম্পিউটার সাধারণত কোন একটি বিশেষ কাজের জন্য তৈরি করা হয় তাকে বিশেষ কম্পিউটার বলে। অর্থাৎ বিশেষ কম্পিউটার দ্বারা শুধু মাত্র নির্দিষ্ট কাজটি ছাড়া অন্য কোন কাজ করা যায় না। এ ধরণের কম্পিউটারগুলো কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিশেষভাবে তৈরি করে থাকেন। ইহার হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যার পরিবর্তনযোগ্য নয়। ইহার প্রোগ্রাম কম্পিউটার মেমরিতে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা থাকে। যেমন-মেইনফ্রেম কম্পিউটার, সুপার কম্পিউটার, MRI ইত্যাদি। আবহাওয়া, ভূমিকম্প, জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পারমাণবিক স্থাপনা, চিকিৎসাক্ষেত্রে, প্রতিরক্ষা ইত্যাদি বিশেষ ও সূক্ষ্ম কাজে বিশেষ কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।

গঠন ও ক্রিয়ানীতির উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার তিন প্রকার। যথাঃ-
১। অ্যানালগ কম্পিউটার(Analog Computer)
২। ডিজিটাল কম্পিউটার(Digital Computer)
৩। হাইব্রিড কম্পিউটার(Hybrid Computer)

১। অ্যানালগ কম্পিউটার (Analog Computer): Analog শব্দটি গ্রীক শব্দ Analogy or Analogous  হতে এসেছে। যার অর্থ সাদৃশ্য বা তুলনা করা। অ্যানালগ পদ্ধতিতে কোন বর্ণ বা সংখ্যা ব্যবহার করা হয় না। এই ক্ষেত্রে একটি ক্রমাগত পরিবর্তনশীল রাশিকে অন্য একটি ক্রমাগত পরিবর্তনশীল রাশির সাথে তুলনা করে পরিমাপ করা হয়। অ্যানালগ কম্পিউটার কাজ করে পদার্থ বিজ্ঞানের নীতির উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ চাপ, তাপ, তরলের প্রবাহ ইত্যাদি পরিবর্তনশীল ডেটার জন্য সৃষ্ট বৈদ্যুতিক তরঙ্গকে অ্যানালগ কম্পিউটারের ইনপুট হিসেবে ধরা হয় এবং প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াকরণের পর ফলাফল সাধারণত কাঁটা বা প্লটারের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। অ্যানালগ কম্পিউটারে কোন ধরণের মেমরি ইউনিট ব্যবহৃত হয় না।

উদাহরণঃ মোটর গাড়ির স্পিডোমিটার, স্লাইডরুল, কাঁটাওয়ালা ঘড়ি ইত্যাদি অ্যানালগ কম্পিউটারের উদাহরণ।

ব্যবহারঃ রাসায়নিক শিল্প, ল্যাবরেটরির নানা রকম পরীক্ষায়, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, বাতাসের চাপ, তাপ, বায়ু প্রবাহ ইত্যাদিতে ব্যবহার হয়।

২। ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer): Digital শব্দটি Digit শব্দ হতে উৎপত্তি। যার অর্থ সংখ্যা। যে কম্পিউটার সিস্টেম ডিজিট তথা বাইনারী সংখ্যা (০, ১) পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে তাকে ডিজিটাল কম্পিউটার বলে। ডিজিটাল কম্পিউটার ০ ও ১ এই দুটি ডিজিট ব্যবহার করে তার যাবতীয় গাণিতিক হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে। এই কম্পিউটার প্রক্রিয়াকরণ ও হিসাব-নিকাশের জন্য সরাসরি সংখ্যা ব্যবহার করা হয় এবং ফলাফল প্রকাশ করে মনিটরের মাধ্যমে লিখিত আকারে। ডিজিটাল কম্পিউটার অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও নির্ভুলভাবে ফলাফল প্রদান করতে পারে। এ ধরণের কম্পিউটারে বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত ও প্রক্রিয়াকরণের ফলাফল মেমরিতে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা থাকে। তাই আধুনিক ও প্রচলিত কম্পিউটার বলতে সাধারণত ডিজিটাল কম্পিউটারকেই বুঝানো হয়।

উদাহরণঃ Pentium I, II, III, IV, Aplle, Macintosh, Laptop ইত্যাদি ডিজিটাল কম্পিউটার।

ব্যবহারঃ আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন- অফিস-আদালত, ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,

লেখাধুলা, বিনোদন, প্রকাশনা, মুদ্রণ ইত্যাদি কাজে ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

৩। হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer): হাইব্রিড শব্দের অর্থ হল সংকর বা সমন্বয়। অ্যানালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের সমন্বয়ে যে কম্পিউটার তৈরি করা হয় তাকে হাইব্রিড কম্পিউটার বলে। হাইব্রিড কম্পিউটারে অ্যানালগ প্রক্রিয়ায় উপাত্ত সংগৃহীত হয় এবং সংগৃহীত উপাত্ত সংখ্যায় রূপান্তর করার পরে তা ডিজিটাল অংশে প্রেরণ করে। কম্পিউটারের ডিজিটাল অংশ প্রাপ্ত উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ করে এবং ফলাফল মনিটরে প্রদর্শন করে।

উদাহরণঃ ECG মেশিন, MRI মেশিন, আধুনিক রাডার ইত্যাদি।

ব্যবহারঃ বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে, হাসপাতালের ইনসেনটিভ কেয়ার, রোগীর রক্তচাপ, শরীরের তাপমাত্রা, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া, ক্ষেপনাস্ত্র,

নভোযান, আবহাওয়া, ভূমিকম্প ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়।

আকার, আয়তন ও ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে অথবা ডিজিটাল কম্পিউটারের প্রকারভেদ।

বর্তমানে ব্যবহৃত কম্পিউটারের মধ্যে অধিকাংশই ডিজিটাল কম্পিউটার। আকার, আয়তন ও ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে ডিজিটাল কম্পিউটারকে চার ভাগে ভাগ করা যায়।

১। সুপার কম্পিউটার
২। মেইনফ্রেম কম্পিউটার
৩। মিনি কম্পিউটার
৪। মাইক্রো কম্পিউটার।

১। সুপার কম্পিউটারঃ এ যাবত আবিষ্কৃত কম্পিউটার সমূহের মধ্যে সুপার কম্পিউটার বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী, দ্রুতগতি সম্পন্ন, ব্যয়বহুল, অত্যাধুনিক কম্পিউটার। এটি সেকেন্ডে কয়েক কোটি ডেটা প্রসেস করতে পারে। বর্তমানে ব্যবহৃত সুপার কম্পিউটারগুলোতে VLSI প্রযুক্তিতে তৈরি বহু মাইক্রোপ্রসেসর বিশিষ্ট ইলেকট্রনিক সার্কিটের ব্যবহার,  কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন এবং অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের ব্যবহার করা হচ্ছে। আকৃতিগত দিক হতে সর্ববৃহৎ এ শ্রেণির কম্পিউটারগুলোর তথ্য সংরক্ষণ ক্ষমতা, কার্য সম্পাদনের বা তথ্য প্রক্রিয়াকরণের দ্রুততা অবিশ্বাস্য রকমের। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা থাকায় শুধুমাত্র উন্নত বিশ্বের গুটি কয়েক দেশ সুপার কম্পিউটার তৈরি ও ব্যবহার করছে। এ কম্পিউটারের সাহায্যে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণা, বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ, নভোযান, জঙ্গি বিমান, ক্ষেপনাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, মহাকাশ গবেষণা, পরমাণু গবেষণা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপার কম্পিউটার  ব্যবহৃত হয়।

উদাহরণঃ আমেরিকার তৈরি ETA-D2P, জাপানের তৈরি SUPER SXII, CYBER-205, CRAY, X-MP ইত্যাদি।

২। মেইনফ্রেম কম্পিউটারঃ মেইনফ্রেম কম্পিউটার হচ্ছে এমন একটি বড় কম্পিউটার যার সাথে শতাধিক টার্মিনাল যুক্ত করে এক সাথে অনেক মানুষ কাজ করতে পারে। এটি প্রতি সেকেন্ডে কয়েক লক্ষ বাইট ডেটা আদান-প্রদান করতে পারে। এ কম্পিউটারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটিতে একাধিক মাইক্রোপ্রসেসর সংযুক্ত হয়ে প্রসেসিং এর কাজ সম্পন্ন করে। ইহার দাম কয়েক কোটি টাকা। অতি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান, জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং উচ্চস্তরের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহার হয়। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৬৪ সালে পরমাণু শক্তি কমিশনে IBM-1620  মডেলের মেইনফ্রেম কম্পিউটার স্থাপন করা হয়।  UNIVAC-1100, IBM-1620 ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য মেইনফ্রেম কম্পিউটার।

৩। মিনি কম্পিউটারঃ মাইক্রো কম্পিউটারের চেয়ে আকারে কিছুটা বড় এ কম্পিউটার টার্মিনালের মাধ্যমে একসঙ্গে একাধিক ব্যবহারকারী অনায়াসে কাজ করতে পারে। এটির গতি, মেমরি ও কাজ করার ক্ষমতা মাইক্রো কম্পিউটারের তুলনায় অনেক বেশি। এ ধরণের কম্পিউটারে প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত সি.পি.ইউ-তে সাধারণ একক বোর্ড বিশিষ্ট সার্কিট বা বর্তনী ব্যবহার করা হয়। একাধিক ব্যবহারকারী একসঙ্গে ব্যবহারের সুবিধা থাকায় মিনি কম্পিউটার বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত গবেষণা ও বিশ্লেষণে, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণঃ  IBM X/34, IBM S/32, IBM S/34 ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য মিনি কম্পিউটার।

৪। মাইক্রো কম্পিউটারঃ মাইক্রো শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র। ক্ষুদ্রাকৃতির মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে তৈরি বলেই এরূপ কম্পিউটারকে মাইক্রো কম্পিউটার বলে। গঠন ও আকৃতিগত দিক হতে মাইক্রো কম্পিউটার খুবই ছোট এবং গতিও অন্যান্য কম্পিউটারের তুলনায় কম। এ ধরণের কম্পিউটারে সাধারণত একটি প্রধান প্রসেসর, প্রধান মেমরি (RAM ও ROM), সহায়ক মেমরি (Hard Disk) এবং ইনপুট আউটপুট সামগ্রী নিয়ে তৈরি করা হয়। আকারে ছোট, দামে সস্তা ও সহজে বহন যোগ্য হওয়ায় ব্যক্তিগত কাজে এটি বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। এজন্য এটিকে Personal Computer বা PC নামে অভিহিত করা হয়। এছাড়া অফিস-আদালত, ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, লেখাধুলা, বিনোদন, প্রকাশনা, মুদ্রণ ইত্যাদি কাজে মাইক্রো কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

উদাহরণঃ Pentium I, II, III, IV, Aplle, Macintosh, Laptop ইত্যাদি মাইক্রো কম্পিউটার।

প্রযুক্তিগত ক্রমাগত উন্নতির সাথে সাথে মাইক্রো কম্পিউটারের আকৃতিতে নানা রকম পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের ব্যবহারিক সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন আকৃতির মাইক্রো কম্পিউটার বাজারে এসেছে। যেমনঃ-

ক) ডেস্কটপ কম্পিউটার (Desktop Computer): ডেস্কে বা টেবিলে স্থাপন করে যে মাইক্রো কম্পিউটার ব্যবহার করা যায় তাকে

ডেস্কটপ কম্পিউটার বলে। অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এটির ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে।

খ) ল্যাপটপ কম্পিউটার (Laptop Computer): সহজে বহনযোগ্য এ ধরণের কম্পিউটারগুলোর বাহ্যিক আকার ব্রিফকেসের

মত। ল্যাপ(Lap) অর্থাৎ কোলের উপর রেখে ব্যবহার করা যায় বলে একে ল্যাপটপ কম্পিউটার বলে। ল্যাপটপ কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা পারসোনাল কম্পিউটারের সমতুল্য বলা চলে।

গ) নোটবুক কম্পিউটার (Notebook Computer): হাতে রেখে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুতকৃত এ কম্পিউটারগুলোর আকার

নোটবুকের মত। ওজনে হালকা, দামে কম ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় এটির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top
error: Content is protected !!